আফগানদের কাছে হার বাংলাদেশর

আফগানদের কাছে হার বাংলাদেশর

ক্রিকেটের তিনটি সংস্করণের ওয়ানডেটাই সবচেয়ে ভালো খেলে বাংলাদেশ । সেই অবস্থা বোধ হয় পাল্টাতে শুরু করল। যার সর্বশেষ উদাহরণ আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে বাংলাদেশের সিরিজ হার।

শারজার উইকেটে ২৫০ রানের আশপাশে হলেও দারুণ লড়াই করা যায়। এটা ঠিক ৩০০ রানের উইকেট নয়। তবে এত কিছুর পর ফলটা এতক্ষণে নিশ্চয় জানেন—২-১ ব্যবধানে বাংলাদেশের সিরিজ হার।

১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৪ উইকেটে ৭৩। সেখান থেকে ৪০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছিল ১৬৬ রান, উইকেট ছিল ৪টিই। অর্থাৎ মধ্যের এই ২৫ ওভারে বাংলাদেশে মাত্র ৯৩ রান করেছে। ওভারপ্রতি ৪ রান করেও তুলতে পারেনি। এই ২৫ ওভারে ১২০ রান তুলতে পারলেও তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৬০ রানের বেশি থাকত। ২৫ ওভারে মিডল ১২০ রানের মতো করতে খুব বেশি ঝুঁকিও বোধ হয় নিতে হয় না। এই ম্যাচে তবু রান ওঠেনি, সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে তো দেখা গেছে ব্যাটিং ধস।

তাওহিদ হৃদয়ের ক্যারিয়ার খুব অল্প দিনের। তবে সাদা বলের ক্রিকেটে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। হৃদয় উইকেটে থাকলে অন্তত রানরেট নিয়ে ভাবতে হয় না। মিডল অর্ডারে এই সিরিজে বাংলাদেশের ভোগার বড় কারণ হৃদয়ের ব্যর্থতা। এই সিরিজে হৃদয় রান করেছেন যথাক্রমে ১১, ১১, ৭। চোটের কারণে শেষ দুই ওয়ানডেতে মুশফিক আর তৃতীয় ওয়ানডেতে নাজমুল হোসেনের ছিটকে যাওয়ায় হৃদয়ের দায়িত্ব ছিল আরও বেশি। কিছুই তো পারলেন না!

ওয়ানডে ক্রিকেটে ওপেনারদের দায়িত্ব একটু বেশিই থাকে। ওয়ানডেতে ২০-৩০ রান করলেই আসল খেলাটা শুরু হয়। দলকে টানার দায়িত্ব তখন তাঁরই। আফগানিস্তান সিরিজে ওপেনার সৌম্য সরকার ৩ ম্যাচেই ভালো শুরু পেয়েছিলেন। প্রথম দুই ম্যাচে আউট হন ত্রিশের ঘরে, পরের ম্যাচে বিশের। তাঁর ব্যাট থেকে একটা বড় ইনিংস এলেই ম্যাচের চেহারা পাল্টে যেতে পারত, যা তিনি করতে পারেননি। তানজিদকে নিয়ে একটু ভাবা প্রয়োজন। ১৮ ম্যাচের ক্যারিয়ারের গড় মাত্র ১৮। প্রতিভাবান তকমা পাওয়া এই ক্রিকেটারের সঙ্গে যা যায় না। এই সিরিজের কোনো ম্যাচে ২৫ রানের গণ্ডিও পার হতে পারেননি।

বরাবরের মত ফিল্ডিংয়ে এ বাজে বাংলাদেশ । গতকাল ক্যাচ, স্টাম্পিং ও একাধিক রানআউটের হাত থেকে বেঁচেছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। এতগুলো সুযোগ পাওয়ার পর তিনি অষ্টম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। প্রথম জীবন পান ব্যক্তিগত ৩০ রানে, পয়েন্ট মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ক্যাচ মিস করেন রিশাদ হোসেন। এরপর ৪৮ রানে একবার, আবার ফিফটির পরও জীবন পান এই ওপেনার। পুরো সিরিজে এমন ফিল্ডিং বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে।

বাংলাদেশের কোনো পেসার ১৫১ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেছেন! পেসার নাহিদ রানা এটি করে দেখিয়েছেন । ওয়ানডে অভিষেকে গতকাল ৪০ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। সিরিজের ৩ ম্যাচেই মিরাজ ৪ নম্বরে ব্যাটিং করেছেন। খুব ভালো করেছেন তা নয়, তবে খুব খারাপও করেননি। তাঁর ২৮, ২২ ও ৬৬ রানের ইনিংসে তিনি যে ব্যাটিংয়ে সাকিব আল হাসানের জায়গা নিতে পারবেন, তার আঁচ আছে।

২০২২ সালে বাংলাদেশে আফগানিস্তান ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমেছিল র‍্যাঙ্কিংয়েও তিন ধাপ পিছিয়ে থেকে। ২০২৪ এ সিরিজ শুরুর আগে ৮৬ রেটিং পয়েন্ট ছিল বাংলাদেশের। আফগানদের ছিল ৮৪। তিন ম্যাচের সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে জয়ের পরে আফগানদের পয়েন্ট এখন ৮৫। বাংলাদেশেরও পয়েন্ট ৮৫, তবে ভগ্নাংশের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে নাজমুলরা এখন ৯–এ। আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা তিনটি সিরিজ জিতে বাংলাদেশকে টপকে গেল আফগানরা।